রোযা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ
মাসআলা : রোযা অবস্থায় কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি
পৌঁছানো মাকরূহ।
লাকীত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—
بَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ، إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا.
(ওযু-গোসলের) সময় ভালোভাবে
নাকে পানি দাও, তবে রোযাদার হলে নয়। —জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬৬; সুনানে আবু
দাউদ ১/৩২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৯৮৪৪; ফাতাওয়া
তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
মাসআলা : এমন কাজ করা মাকরূহ, যার দ্বারা
রোযাদার নিতান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন, শিঙ্গা
লাগানো। —আলমুহীতুল
বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০
মাসআলা : রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের
করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা
রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।
সাবেত আলবুনানী রাহ. বলেন, আনাস রা.কে
জিজ্ঞাসা করা হল, রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে আপনারা কি মাকরূহ
মনে করতেন?
তিনি বলেন, না; তবে এ
কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৪০; আলমুহীতুল
বুরহানী ৩/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫
মাসআলা : রোযার হালতে গীবত করলে, গালি-গালাজ করলে, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখলে, গান-বাদ্য শুনলে এবং যে কোনো বড় ধরনের
গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম, তা তো বলাই
বাহুল্য।
হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেছেন—
وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ.
তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন সে যেন অশ্লীল
কথা না বলে এবং শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। —সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪;
সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতে এসেছে, ‘রোযাদার যেন কোনো অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত না হয়।’ —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৬৩
(১/৩২২)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি
মিথ্যা-প্রতারণা ও গুনাহের কাজ ত্যাগ করে না আল্লাহ তাআলার নিকট তার
পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই। —সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৩; সুনানে আবু
দাউদ, হাদীস ৩৩৬২ (১/৩২২)
যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ নয়
মাসআলা : রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ
নয়।
আতা রাহ. বলেন, রোযাদারের
জন্য সুরমা ব্যবহার করতে দোষ নেই। —মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮; আলবাহরুর
রায়েক ২/২৮০
মাসআলা : রোযার হালতে প্রয়োজনে জিহ্বা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া বা
প্রয়োজনে বাচ্চাদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন স্বাদ
গলার ভেতরে চলে না যায়।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. রোযাদার মহিলা বাচ্চার
জন্য খাদ্য চিবানোকে দোষের বিষয় মনে করতেন না। —মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭; আলমুহীতুল
বুরহানী ৩/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৬
মাসআলা : রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক
করাও মাকরূহ নয়।
আমের ইবনে রবীয়া রা. বলেন, নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি রোযার হালতে অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে
দেখেছি। —সহীহ
বুখারী ১/২৫৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০০
হাসান রাহ.কে রোযা অবস্থায় দিনের শেষে
মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রোযা
অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব
দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক কর। —মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০২
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, রোযা
অবস্থায় দিনের শুরু ও শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই।—প্রাগুক্ত ৪/২০৩
মুজাহিদ রাহ. রোযা অবস্থায় তাজা মিসওয়াক
ব্যবহার করা দূষণীয় মনে করতেন না। সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকেও অনুরূপ বক্তব্য
বর্ণিত আছে। —প্রাগুক্ত
৪/২০২; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯; আলবাহরুর
রায়েক ২/২৮১
0 মন্তব্যসমূহ